নিজস্ব প্রতিবেদক :
বকুল গাছের সারি, আলম সাধুর ঘাট আর বিখ্যাত হাট নিয়ে ঐতিহ্যের লীলাভুমি ঝাওয়াইল প্রাচীন এক জনবসতী স্থান। একসময় উত্তর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ছিল আনন্দ বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। জমিদার প্রথায় বছর শেষে খাজনা গ্রহন উপলক্ষে প্রজাদের জন্য হালখাতার আযোজনসহ সাতদিন ব্যাপী কাচারি মাঠে চলত বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ানো আর যাত্রা গানের রাস উৎসব। সপ্তাহ জুরে আনন্দে আত্নহারা থাকতো এলাকার প্রজাসাধারণ।
ক্রীড়াঙ্গনে ঝাওয়াইল ছিল খুবই শক্তিশালী। প্রায় সারা দেশ দাপটের সাথে চষে বেড়াত ঝাওয়াইলের নামকরা ফুটবল দল। কাচারি পাড়ার নাট খানায় সারা বছরই মঞ্চস্থ হতো এলাকার খ্যাতিমান শিল্পীদের নাটক, যাত্রাগান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আগত খ্যাতনামা কন্ঠ শিল্পী, জ্ঞানী গুনী সাধক, আর যাজকদের পদচারনায় মুখর হতো এলাকা। সেই ঐতিহ্যের ঝাওয়াইল আজ তার স্বীয় রুপ হারিয়ে ঠিকানা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী আর নেশাগ্রস্তদের।
ঝাওয়াইল বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের স্থায়ী-অস্থায়ী নেশার আস্থানা। এখানে দিবারাত্রই চলে নেশা সেবনসহ ক্রয়-বিক্রয়। গাজা, ভাং, বাংলা মদ, চৌয়ানি, হিরোইন, প্যাথেডিন, ফেনন্সিডিল, ইয়াবা, ড্যান্ডিসহ সকল রকম নেশা দ্রব্যই এখানে পাওয়া যায়। এলাকায় বুতাম (ইয়াবা), ডাল(ফেন্সিডিল), সবজি(গাজা), রস(ড্যান্ডি) সাংকেতিক নামেও বিক্রি হয়। জনশ্রুতি আছে ঝাওয়াইলের বাংলা মদ, গাজা স্বাদে গন্ধ অতুলনীয়। তাই মদ ও গাজার জন্য দুরদুরান্ত থেকে প্রতিদিন নানা শ্রেনীর গ্রাহকদের আনাগোনা দেখা যায়।
এলাকার যুব সমাজ থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা নেশাদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় আগ্রহে ইয়াবা ও ড্যান্ডি সেবন করছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে এলাকায় মাদক সেবনের সংখ্যা এতই বেড়ে গেছে যে, নেশা সেবনের নিদৃষ্ট গোপান স্থান ছাড়িয়ে এলাকার ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠ মহারানী হেমন্ত কুমারী উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনিয়ন ভবন, পোষ্টঅফিস, হাসপাতাল, পরিত্যাক্ত কাচারি বাড়ীর চারপাশে নেশার জমজমাট আসর গড়ে উঠেছে। এসব দেখেও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা এলাকার সাধারনত মানুষ সন্মান বাচাতে এড়িয়ে যান এদের। জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০/১৫ লক্ষ টাকার খুচরা ও পাইকারি নেশা দ্রব্য বিক্রি হয়।
মাদক ব্যবসায়ীরা অবাধে মাদকের ব্যবসা করাতে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঝাওয়াইলের হাজার বছরের লালিত, ঐতিহ্য, সুনাম, খ্যাতি, মর্যাদা। নেশার ছোবলে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে এলাকার উঠতি বয়সের স্কুল কলেজ পড়–য়া তরুণসহ যুবসমাজ। সর্বশান্ত হচ্ছে এসব ছেলেদের পরিবার। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে নানা রকমের অপরাধ কর্মকান্ড। ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার পরিবেশ। আতংকিত হচ্ছে এলাকা। ভেঙ্গে যাচ্ছে মা-বাবার স্বপ্ন।
এলাকার সচেতন মহল জানান, অবাধে হাতের নাগালে মাদক পাওয়ায় এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া শত শত যুবক ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বেড়ে গেছে চুরিসহ নানা রকমের অপরাধ। বিষয়টি প্রতিকারে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আশু ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা দাবী জানাই।